নিজস্ব প্রতিবেদক:
রূপগঞ্জবাসীর স্বপ্নের “বীরপ্রতীক গাজী সেতু” উদ্বোধন হওয়ায় খুশি লাখ লাখ মানুষ। এ সেতুর কারনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপর চাপ কমবে এবং এলাকার আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। এমনকি রাজধানীর সঙ্গে রূপগঞ্জের দূরত্ব কমে যাবার কারণে নতুন নতুন শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে বলেও আশা করা হচ্ছে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সেতুটির অানুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন। এই সেতুটির কারণে বদলে যাচ্ছে পুরো রূপগঞ্জের চিত্র। সেতুটি নির্মাণের উদ্যোক্তা নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। সেতু চালুর পর যাত্রীদের মধ্যে বিরাজ করছে স্বস্তি। খুশি পরিবহন মালিক, চালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাই। উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে দিনরাত সেতুটি দেখার জন্য হাজারো মানুষের ঢল নামে সেতুটিতে।স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা অনেক বেশি খুশি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুটির উদ্যোক্তা বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করেছেন। সেতুটি নির্মাণের কারণে খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, সবাই লাভবান হবে। এ অঞ্চলটি একটি সমৃদ্ধিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে।সুত্র জানায়, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রচেষ্টায় এই সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। শীতলক্ষ্যা নদীর ওপরে আরও তিনটি ব্রিজ আছে, সেগুলো হচ্ছে কাঁচপুর ব্রিজ, কাঞ্চন ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজ। এই অঞ্চলে বেশ বড় একটি জনগোষ্ঠীর বাস। রয়েছে কলকারখানাও। এখন এই সেতুটি হওয়ায় অন্য ব্রিজগুলোর ওপর চাপ কম পড়বে। একইসঙ্গে রূপগঞ্জের মানুষের চলাচলের জন্য বীরপ্রতীক গাজী সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং পণ্য দ্রুত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহে সহজীকরণ হবে।স্থানীয়দের অভিমত, ‘রূপগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শীতলক্ষা নদী উপর নবনির্মিত বীরপ্রতীক গাজী সেতুটি খুলে দিয়েছে এ অঞ্চলের সম্ভাবনার নতুন দ্বার। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পুরো অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলছে।’স্থানীয় বাসিন্দা কায়েতপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ওমর ফারুক ভুঁইয়া ও সাধারন সম্পাদক নাদিম হোসেন অপু বলেন, সেতু নির্মিত হওয়ায় এলাকার মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী শীতলক্ষা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে তাদের সেই দাবি পূরণ হওয়ায় তারা খুশি হয়েছেন। সেতুটি জনগণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ায় কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগের পাশাপাশি এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় যানবাহন চালানো যাবে নির্বিঘ্নে। সেতু নির্মাণে যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন হওয়ায় এলাকাবাসী খুশি।কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বজলুর রহমান বলেন, রূপগঞ্জ উপজেলাসহ আশপাশের এলাকার মানুষের স্বপ্নের সেতু উদ্বোধন হয়েছে, এটা এলাকার মানুষের কাছে মহা আনন্দের। দলিল লিখক ওসমান গনি, অাবু জাবের বাবুল বলেন, বর্ষাকালে নৌকায় এ নদী পার হতে গিয়ে একাধিকবার নৌকাডুবি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সেতুটি এলাকাবাসীর কাছে আশীর্বাদস্বরূপ।সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর সেতুটি দেখতে আসা এক দম্পতি বলেন, সেতুতে এসে খুব ভালো লাগছে। সেতুর নির্মাণশৈলী চমৎকার। সেতুতে অনায়াশে যানবাহন চলাচল করছে, কোনো যানজট নেই।সিএনজি চালক মালেক মিয়া, প্রাইভেটকার চালক বিল্লাল হোসেন ও ট্রাক চালক লোকমান হোসেন জানান, সেতুটি চালু হওয়ায় যাত্রী, চালক, পরিবহন মালিক- সবাই খুশি। খুশি এজন্য যে, যেখানে ফেরি পারাপার হতে যানজটের কারণে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময়ও লাগতো সেখানে এখন মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে। সেতুটি উদ্বোধন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞ রূপগঞ্জবাসী।সেতুর পশ্চিমপাড়ের বাসিন্দা রূপগঞ্জ ইউনিয়ন অাওয়ামীলীগ নেতা মোহাম্মদ অানছার অালী বলেন, স্বপ্নের বীরপ্রতীক গাজী সেতুটি হওয়ায় আমাদের পশ্চিম পাড়সহ পূর্ব পাড়ের লাখ লাখ মানুষের দুঃখ লাঘব হবে। শুধু তাই নয়, সেতুটির মাধ্যমে স্থানীয় বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটতে চলেছে। সেতুটি নির্মাণ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি পূরণ করেছেন। সেতুটি হওয়ায় এলাকার জনগণ অত্যন্ত খুশি। এজন্য আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।বীর প্রতীক গাজী সেতু প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা মুড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফায়েল অাহমেদ অালমাছ বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর একান্ত প্রচেষ্টায় এই সেতুটি নির্মাণ হয়েছে। এই সেতুটি হওয়ায় আমাদের অনেক উপকার হবে। রাজধানীর সঙ্গে যাতায়াত আরও সহজ হবে। সেতুটি এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। সেতুুটি এ অঞ্চলের ইতিবাচক আর্থসামাজিক পরিবর্তনের সুযোগ এনেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান ও বাণিজ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।বীর প্রতীক গাজী সেতুটি নির্মাণের কারণে রূপগঞ্জের মানুষের ভোগান্তি হ্রাস পাবে জানিয়ে কায়েতপাড়া ইউনিয়ন অাওয়ামীলীগের সভাপতি মোহাম্মদ জাহেদ অালী বলেন, এই সেতুটি নির্মাণে পুরোটাই অবদান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর। তিনি এই সেতুটি নির্মাণের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। দিনের পর দিন মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন। সেতুটি হওয়ায় এখন রূপগঞ্জের মানুষের রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ আরও বাড়বে। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, রূপগঞ্জবাসীর স্বপ্ন ছিল এই সেতু। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীর প্রচেষ্টায় সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়ায় শীতলক্ষ্যার দুই পারে মুড়াপাড়া ও কায়েতপাড়ার মধ্যে যোগাযোগ অনেক সহজ হয়েছে। ফেরি পারাপারের দুর্ভোগ বন্ধ হয়েছে। এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পূর্বাচল উপশহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করেছে এই সেতু। রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অালহাজ্ব শাহজাহান ভুঁইয়া বলেন, এ সেতুর কারনে শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ের মানুষের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আরো দৃঢ় হয়েছে। সেতু নির্মাণে দীর্ঘ দিনের অবহেলিত এলাকার মানুষের মুখে হাসি ফুটছে। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প-কারখানার মালামাল পরিবহনে সময় ও ব্যয় কমে আসছে। তাতে কারখানার শ্রমিক, কর্মচারী, মালিক ও এলাকাবাসী লাভবান হচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক-এর নামে সেতুটির নামকরণ করায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক বলেন, রূপগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি সেতু। সেতুটির উদ্বোধন হওয়ায় ভালো লাগছে। সেতু হওয়ায় এপার-ওপারের মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি হলো। সেতুটি নির্মাণের ফলে শীতলক্ষার দুই পাড়ের লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন।রূপগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরনে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর সেতু নির্মান হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক অারো বলেন, বীরপ্রতীক প্রতীক গাজী সেতু উন্নয়নের মাইলফলক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু উদ্বোধন করে রূপগঞ্জবাসীকে ধন্য করেছেন।উল্লেখ্য, গত রবিবার (২২ নভেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত “বীর প্রতীক গোলাম দস্তগীর গাজী” সেতু উদ্বোধন করেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ২০১২ সালের জুলাই মাসে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর দৈর্ঘ্য ৫৭৬ দশমিক ২১ মিটার। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৭৪ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।