স্বতন্ত্র প্রার্থীর হলফনামায় মিথ্যা তথ্য

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ(১) রূপগঞ্জ আসনে তথ্য গোপনের পুকুর চুরি করেছেন আওয়ামীলীগের মনোনয়র বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূইয়া। সূত্র বলছে ৫ বছরে তার আয় বেড়েছে প্রায় ১৭ গুণ। আর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮৮ গুণেরও বেশি।
অথচ হলফনামায় গাড়ি নেই, নগদ টাকা নেই, গয়না নেই, ব্যাংক একাউন্ট নেই, সঞ্চয়পত্র থেকে শুরু করে কিছুই নেই বলে উল্লেখ্য করেছেন তিনি। এতে বিস্মিত রূপগঞ্জের মানুষ। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে তাহলে তিনি কিভাবে বিলাসী জীবন যাপন করছেন এই নেতা !
তবে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে থলের বেড়াল। তথ্য গোপন করেছেন এই প্রার্থী। আর মূল হলফনামায় তথ্য গোপন করে নির্বাচন বিধিমালা আইন লঙ্গন করা হয়েছে। যে কারনে তার প্রার্থীতা বাতিলের সুপারিশ তুলেছেন অন্যান্য প্রার্থীরা।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ভূঁইয়া। প্রায় পাঁচ বছর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা এই নেতা সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে সম্প্রতি চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। চেয়েছেন নৌকার মনোনয়ন। তবে দলীয় মনোনয়নে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন তিনি।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, গাড়ি নেই, নগদ টাকা নেই, গয়না নেই, ব্যাংক একাউন্ট নেই, সঞ্চয়পত্র থেকে শুরু করে কিছুই নেই তার । রয়েছে কেবল ৭ লাখ টাকা ব্যাংক ঋণ।
কিন্ত অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিনি নগদ ১০ লাখ টাকা, সাড়ে ৪০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, নিজের গাড়ি , ৪৫ ভরি স্বর্ণলংকারসহ তার স্থাবর অস্থারন সম্পদের বিবরন হলফনামায় উল্লেখ্য করেছিলেন।
চলতি নির্বাচনে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হবার হলফনামায় তিনি এসবের কিছুই উল্লেখ্য না করলেও স্থাবর আয় ব্যক্তিগত আয় বাড়ানোর কথা তুলে ধরেছেন। তবে আয়কর আর হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টি এখনও ঘোলাটে
জেলা রিটানিং অফিস সূত্র জানায়, শাহজাহান ভূইয়া তার হলফ নামায় নিজের নামে কোন ব্যাংক একাউন্ট, নগদ টাকা কিংবা স্বর্ণলংকার নেই বলে উল্লেখ্য করেছেন। তাছাড়া একটি বেসরকারি ব্যাংকে মাত্র ৭ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে বলেও মূল হলফনামায় উল্লেখ্য করেন।
তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শাহজাহান ভূইয়া ও তার ছেলে সাইফুল ইসলাম চলতি বছরেই প্রিমিয়ার ব্যাংক কাঞ্চন শাখা থেকে ৭০ লাখ টাকা যৌথভাবে গৃহনির্মাণ ঋণ নিয়েছেন। যা পর্যায়ক্রমে গত ০৫/০৪/২০২৩ তারিখে ৪০ লাখ টাকা এবং ১১/০৬/২০২৩ তারিখে আরও ৩০ লাখ টাকা তাদের ব্যাংকের ওই শাখার হিসেব নং–০২১৭৭৩২০০০০০০০২ এ দুই ধাপে জমা হয়। এছাড়া জনতা ব্যাংক মুড়াপাড়ায় শাহজাহান ভুইয়ার ব্যক্তিগত ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার–০১০০০৯২৫৬৯৬৬৫ এ গত ২৮ জুলাই -২০২৩ তারিখ অবধি ১৫৭৮৯৯৩ টাকা সঞ্চিত ছিল। এছাড়া পারিবারিকভাবে পাওয়া সম্পত্তির বাইরেও অসংখ্য সম্পদের মালিক তিনি যা হলফনামায় উল্লেখ্য করেননি। পাশাপাশি একজন উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়িতে সোনার গয়না নেই এই ব্যাপারটি বিস্মিত করছে সকলকে। অনেকে বলছে ৫ বিগত ৫ বছরে রাজধানীর এক স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপে প্রতিনিয়ত যাতায়ত ছিল তার। ৪৫ ভরির অলংকার ৪৫ শত ভরি হবার বদলে উধাও হয়ে যাবার বিষয়টি বিস্মিত করছে তাদের। নিজের ৮ তলা ভবন থাকলেও মাত্র ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকার ফার্নিসার আর ইলেকট্রনিক্স মালামালের কথা উল্লেখ্য করেছেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন থেকে চলতি বছর যে আটটি তথ্য সুস্পষ্টভাবে প্রদান বাধ্যতামূলক করেছেন তারমাঝে অন্যতম হচ্ছে ‘কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রার্থী একক বা যৌথভাবে বা তার ওপর নির্ভরশীল সদস্যের নেওয়া ঋণের পরিমাণ জানানো।
শাহজাহান ভূইয়া এই তথ্য গোপন করে নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করেছেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১২ (৩বি) অনুযায়ী প্রত্যেক মনোনয়ন পত্রের সাথে অন্যান্য তথ্যের সাথে প্রার্থীর নিজ ও নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী সহ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণ এর পরিমান উল্লেখ পূর্বক একটি হলফনামা জমা দিতে হয় এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর অনুচ্ছেদ ১৪ (৩) অনুযায়ী, অনুচ্ছেদ ১২ বা ১৩ এর বিধান প্রতিপালিত না হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে বা কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে উক্ত মনোনয়নপত্রকে বাতিল ঘোষণা করতে পারে। এছাড়াও যেহেতু মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা তথ্য গোপন করে হলফনামায় সম্পাদন করা একটি গুরুতর অপরাধ তাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা তথ্য গোপন করে হলফনামা সম্পাদন করার বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া যায়।

এ বিষয়ে অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান বলেন, তিনশো টাকার স্ট্যাম্পের দায়ের করা হলফনামায় তথ্য লুকানো গুরুতর অপরাধ এবং এ কারনে যিনি এই প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলের দাবি জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মাহমুদুল হক বলেন, ‘আমরা প্রার্থীদের হলফনামা যাচাই করে দেখেছি। তেমন অসংগতি পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, হলফনামায় তথ্য গোপন করা অপরাধ। কোনো প্রার্থী তাঁর হলফনামায় তথ্য গোপন করলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *