রূপগঞ্জে বিলীনের পথে কৃষিজমি

রূপগঞ্জ শীর্ষ সংবাদ

নিউজ রূপগঞ্জ ডটকম: রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো, কাঞ্চন পৌরসভা, গোলাকান্দাইল, রূপগঞ্জ, ভোলাবো ও দাউদপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা শতাধিক অবৈধ ইটভাটা কৃষি জমির টপসয়েল গিলে ফেলছে। তাতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়ছে জনজীবন। স্থানীয় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থাপিত অবৈধ ইটভাটা কৃষি জমির টপসয়েল গিলে খাচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে ফসলী জমির উর্বরতা। মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। হুমকির মুখে পড়ছে আগামীর ভবিষ্যৎ। জনবসতি এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে কেউ ইটভাটা করতে পারবে না সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেনা কোন ইটভাটার মালিক। ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রূপগঞ্জবাসী। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইটভাটার চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোন কোন ভাটার সামনে কয়লার স্তুপ থাকলেও আড়ালে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার ভেতরে রয়েছে কাঠের স্তুপ। আশপাশের গাছগুলো বিবর্ণ। মরে যাচ্ছে গাছ। নেই আশানুরুপ ফলন। ভ্যাকু দিয়ে কৃষি ও ফসলি জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে। কোন কোন জমি পনের থেকে বিশ ফুট গভীরে মাটি কাটা হচ্ছে। আর ভেঙ্গে পড়ছে আশপাশের জমি। পরিবেশ দূষণকারী প্রায় শতাধিক ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লাখো মানুষ। মরে যাচ্ছে আম, জাম, কাঁঠাল, নারকেলসহ বিভিন্ন ওষধি ও ফলদ গাছ। ইটভাটায় ব্যবহারকারী ইছারমাথা কিংবা ভটভটির দাপটে সড়কগুলো খানাখন্দে পরিণত হচ্ছে। ফলে প্রায়ই দূর্ঘটনা ঘটছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ ফুসফুসজনিত নানা রোগে ভুগছে উপজেলার মানুষ। বিরাবো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা বলেন, একসময় ফসলে ভরা ছিল মাঠ। চারদিকে ছিল সবুজের সমারোহ। এখন কৃষি জমিতে শুধু বালি আর ইটভাটা। আর ইটভাটার মাটি নেয়ার গাড়ি থেকে সৃষ্ট ধূলায় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের জামা কাপড় নষ্ট হচ্ছে।তারাবো পৌরসভার কান্দাপাড়া এলাকাবাসী জানান, ঘণবসতি ও জনবহুল এলাকা কান্দাপাড়ায় স্থাপিত ইটভাটার কালেঅ ধুয়া প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষণ করছে। ইটভাটার মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবাধে ইটভাটার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
দাউদপুর ইউনিয়নের রোহিলা এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, আমার তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করি। কিন্ত এবছর পাশের জমিতে ভ্যাকু দিয়ে গভীর খনন করে মাটি কেটে নেয়ায় আমার জমি ভেঙ্গে পড়েছে। তাই ফসলও করতে পারছি না। বিরাবো গ্রামের আব্দুল জব্বার বলেন, রাতের আধাঁরে ভ্যাকু দিয়ে গভীর খনন করে কেটে নেয়া হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি। ভাঙ্গছে গ্রামীণ রাস্তাঘাট। খানা খন্দকে ঘটছে দুর্ঘটনা। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় গাছ পালা ঝলসে যাচ্ছে। বৃষ্টি হলে কাঁদা আর শুকনো মৌঁসুমে ধুলো-বালির কারণে চলাচল করা যায়না।
ভোলাব ইউনিয়নের তারু মার্কেট এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, মাটি খেকোদের কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। নিঃস্ব হতে চলছে কৃষকরা। ইটভাটায় মাটি নেয়ার কাজে সেচখালে বাঁধ দেয়ায় জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তাতে চরমভাবে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, ইটভাটার লাইসেন্স ডিসি অফিস থেকে দেওয়া হয়। কয়টা ইটভাটা বৈধ বা কয়টা অবৈধ সে তালিকাটাও আমার কাছে নেই। ইট ভাটার কাগজপত্রের বিষয়ে আমার কাছে কেই আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আল-মামুন বলেন, অবৈধ ইটভাটা বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান রূপগঞ্জ উপজেলাও অভিযানের আওতায় রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, কেউ নিয়ম বর্হিভুতভাবে ইটভাটা চালালে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *