বর্ষার পানিতে মেতে ওঠেছে শিশু-কিশোর

রূপগঞ্জ


নিউজ রূপগঞ্জ ডটকম : বছরের শুরুতেই করোনার থাবায় থমকে গেছে গোটা বিশ্ব। আর এটি এমন এক ভাইরাস যা স্তব্ধ করে দিয়েছে পৃথিবীর শিশুদের প্রাণচাঞ্চল্য। এ ভাইরাসে শিশুরা অপেক্ষাকৃত অনেক কম আক্রান্ত হলেও বলা হচ্ছে এ ভাইরাসের নীরব শিকার তারা। তাই দীর্ঘ চার মাস ধরে শিশুরা ভুলেই গেছে আনন্দ-উল্লাস করতে। বর্ষার পানিতে পূর্ণ হয়ে গেছে নারায়ণগঞ্জের খাল-বিল, নদী-নালাগুলো। নারায়ণগঞ্জের শিশু কিশোরেরা আনন্দে মেতে ওঠে বর্ষার নতুন পানিতে। বেলা হলেই এসব জলাধারের স্বচ্ছ পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে গ্রামের দুরন্ত শিশু-কিশোরেরা। বড়রাও যেন ফিরে যেতে চান সেই ফেলে আসা শৈশবের দুরন্তপনায়। উঁচু স্থান থেকে শিশুদের মতো লাফঝাঁপে কিছুক্ষণের জন্য তাঁরাও ফিরে গিয়েছিলেন মধুর শৈশবে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রতিটি উপজেলায় বিভিন্ন নদী-নালার উঁচু ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পানিতে পড়ার অপরূপ দৃশ্য। তেমনই নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার রামচন্দ্র ব্রিজ থেকে ১০-১২ বছর বসয়ী এক ঝাঁক কিশোর মনের সুখে নদীর পানিতে ঝাঁপ দিচ্ছে। তারা যেন নদীর বুকে নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। ওদিকে নদীর ঐ কিনারায় নয়নের মা ডাকছে খোকা উঠে আয়, নদীতে বেশি গোসল করতে হয় না। সর্দি, জ্বর আসবে। তোর বাবা লাঠি নিয়ে আসছে। উঠে আয় বাবা? বর্ষাকালে এ যেন এক নিত্যদিনে চিত্র। একই রকমের দৃশ্য দেখা গেলো, রূপগঞ্জ উপজেলার ভোলাব ইউনিয়নের গুতুলিয়া এলাকায় ১৭ জনের এক ঝাঁক কিশোর মনের আনন্দে ব্রিজে উঠছে বিলের পানিতে ঝাঁপ দিতে। তাদের মাঝে বিরাজ করছে কি যেন এক অনুভূতি। দুনিয়াদারি তাদের মনে নেই। নদীর পানিতে থাকা সকল প্রাণীর সাথে যেন তাদের একটা স্বক্ষতা গড়ে উঠেছে। ভয় আর ভীতির কোন বালাই নেই তাদের কাছে। দীর্ঘ সময় ধরে পানিতে তাদের ঝাঁপাঝাঁপিতে শরীর ফ্যাকশা হয়ে গেছে, দু‘চোখ লাল হয়ে উঠেছে। তবুও তাদের কোনো ক্লান্তি নেই। মনের সুখে ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দিচ্ছে আর নদীতে গা ভাসিয়ে সাঁতার কাটছে। কথা হয় আড়াইহাজার উপজেলার রামচন্দ্রী এলাকার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র নয়নের সাথে সে বলেন, প্রতিদিন দুপুর ১২টা বাজলে আমরা গ্রামের সব বন্ধুরা এই ব্রিজে আসি। আর মনের সুখে গোসল করি। ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে নদীতে গোসল করতে খুব ভাল লাগে। কিন্তু শান্তি মতো লাফালাফি, ঝাঁপাঝাঁপি করতে পারি না, কারণ ঐ দেখেন মা এসে দাঁড়িয়ে আছে। নয়নের মার সাথে কথা হয়,তিনি বলেন, আমার এক মেয়ে এক ছেলে। নয়নকে বার বার বলি নদীতে গোসল করা ভাল না। অসুখ হতে পারে, কিন্তু কে শোনে কার কথা। দুপুর হলে একজুটি ছেলেদের সাথে ছুটে আসে এই ঘাটে। সোনারগাঁও উপজেলার জামপুর এলাকার ৭ম শ্রেণির এক ছাত্র রায়হান বলেন, এখন আমাদের স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাড়িতেও কোন কাজ নেই। এখন প্রতিদিন নদীতে আসি আর বন্ধুদের সাথে সাঁতার কাটি। বাড়িতে গোসল করতে ভাল লাগে না। বাবা-মা নিষেধ করে তবুও চুপ করে পালিয়ে আসি। বন্দর উপজেলার নাঙ্গলবন এলাকার ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আমীর হোসেন বলল, আমাদের এই নদীতে বর্ষাকালে পানি থাকে। পরে বর্ষা শেষে পানি শুকিয়ে যায়। বর্ষা আসলে মনে হয় সব সময় নদী আমাকে ডাকছে। তাই দুপুর হলে নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। বার বার ছুটে আসি এই নদীর বুকে। নদীতে যখন পানি থাকে না তখন মন শুধু কেঁদে উঠে আর বলে এই নদী তুই কবে আবার পানিতে ভরপুর হয়ে যাবি। আমার যে তোর বুকে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। চলার পথে এই কিশোরদের ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ আর সাঁতার কাটার এই অপূর্ব দৃশ্য দেখে আমিও অতীত জীবনে হারিয়ে গেলাম। রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকায় আমাদের বাড়ি আমার নাম বিপ্লব হাসান। গোলাকান্দাইল এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট একটি খাল। তখন তো আর এখনকার মতো ছিল না। সবাই প্রায় খালেই গোসল করতো। গোলাকান্দাইল হাটের পরে একটি ব্রিজ ছিলো, সকাল ১০ টা বাজলেই মনে হতো ব্রিজ যেন আমাকে ডাকছে, নিজেকে স্থির রাখতে পারতাম না। প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে আমার সমবয়সীদের ডাকতাম আর বলতাম চল রে ব্রিজে যাবি না? এক দল ছেলে-মেয়ে একত্রে ছুটতাম সেই খালের পানিতে। গামছা বা বাড়তি কোন কাপড় হাতে নিতাম না। খালি হাতে দৌড় আর দৌড়। ব্রিজের কাছে এসে কোন রকম পরনে হাপ প্যান্টিটি খুলে দিতাম ঝাঁপ। পানিতে নিজেকে তলিয়ে দিতাম। কি যেন একটা আলাদা অনুভূতি পেতাম। মনে হয় মায়ের কোলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আরাম-আয়েষে নিজেকে হারিয়ে ফেললা

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *