নিজস্ব প্রতিবেদক:
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শকে সামনে রেখে চলবে। অন্যায় অনিয়ম করবে না। সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য নিবেদিত হয়ে উঠবে। বাণিজ্য মেলার বঙ্গবন্ধু গ্যালারি পরিদর্শনে এসে ছেলে মেয়েদের উদ্দেশ্য করে ব্যবসায়ী হারুণ অর রশিদ এ কথাগুলো বলছিলেন। পাশেই ছিলেন তাঁর স্ত্রী রাবেয়া বেগম। ঢাকার শ্যামলী থেকে তিনি স্বপরিবারে গত ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার মেলায় এসেছেন। কেমন লাগছে বাণিজ্য মেলা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজধানীর বাইরে হলেও এলাকাটি সুন্দর। প্রাকৃতিক পরিবেশ। শান্ত। কয়েক বছর পর এখানকার পরিবেশ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে মেলার আশপাশে ধূলায় মাখামাখি। সেখানে প্রতিদিন দফায় দফায় পানি ছিটানো প্রয়োজন। এখানেই গত ৫ জানুয়ারি বুধবার রাতে মেলা ও বঙ্গবন্ধু গ্যালারি পরিদর্শনে আসেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক। এসময় তারাবো পৌরসভার মেয়র হাসিনা গাজী, কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা ফেরদৌসী আলম নীলা, রূপগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ছালাউদ্দিন ভুঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম.এ মোমেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ মকবুল হোসেন, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইমন হাসান খোকন, আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব, ফিরোজ ভুঁইয়া, মশিউর রহমান তারেক, ওবায়দুল মজিদ জুয়েল, নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন রাজিব, মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া রূপগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজ, ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন, মহিলালীগ নেত্রী লাকি আক্তার, নিগার সুলতানা, রূপগঞ্জ ইউনিয়ন তাঁতীলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল প্রধান, ছাত্রলীগ নেতা কিরণ ভুঁইয়া, আজমির হোসেনসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এবার বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিভিশন সেন্টারের স্থায়ী প্যাভিলিয়নে মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সেন্টারের প্রধান ফটকে ঢুকতেই বঙ্গবন্ধু গ্যালারির অবস্থান। প্রায় ৫ সহস্রাধিক বর্গফুটের এ গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর জন্মকাল। ছাত্রজীবন। রাজনৈতিক জীবন। জেল জীবন। বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত নিউজউইক ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ, পরিবার পরিজনের সঙ্গে আনন্দঘণ মুহূর্তের দুর্লভ ছবি। দেশি-বিদেশি স্বনামধন্য ব্যক্তিদের সাথে বঙ্গবন্ধুর ছবি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসিডেন্ট জেরান্ড ফোর্ড, সোভিয়েত প্রিমিয়ার অ্যালেক্সেই কোসিগিনেড, শ্রীমতি ইন্দিরাগান্দী, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথ ও কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্টোর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি উল্লেখযোগ্য। বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন, ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ও বঙ্গবন্ধুকে ঘাতকের বুলেটে হত্যার ছবি এখানে স্থান পেয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু গ্যালারিতে দর্শনার্থীদের ভিড়। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী কেউ বঙ্গবন্ধুর উক্তি নোট করছে। কেউবা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির সঙ্গে ছবি তুলছেন। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ৬৫টি ছবি গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। এদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জেল জীবন, অসমাপ্ত আত্বজীবনী, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, দিল্লি অভিযানসহ বেশ কয়েকটি বই স্থান পেয়েছে। এসকল বইয়ের কপি ক্রয় করার ব্যবস্থা থাকলে আরও ভাল হতো বলে দর্শনার্থীরা মত প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা উক্তিগুলো দর্শনার্থীরা গুরুত্ব সহকারে পড়ছেন।
বঙ্গবন্ধু ৪ হাজার ৬৮২ দিন জেল খেটেছেন। তাঁর জেল জীবনকে তুলে ধরতে প্রতিকী একটি জেলখানা গ্যালারিতে স্থান পেয়েছে। ব্যতিক্রমধর্মী এ উপস্থাপনা দর্শকদের মনে সাড়া ফেলছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ, উক্তিসহ কর্মময় জীবন গ্যালারির তিনটি টেলিভিশনে সব সময় প্রদর্শন করা হচ্ছে।
গ্যালারির দায়িত্বপ্রাপ্ত জামাল উদ্দিন শাহ বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ হাজার দর্শক বঙ্গবন্ধু গ্যালারি পরিদর্শন করছে। শুক্র ও শনিবার দর্শকের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে আসা ব্যবসায়ী দম্পত্তি রাকিবুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু গ্যালারিটি সত্যিই অনুকরণীয়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে ছেলে মেয়েরা সামান্যতম অনুকরণ করতে পারলেই তাদের জীবন সার্থক হবে। গ্যালারী প্রদর্শনের সফলতা আসবে।
মিরপুর থেকে আসা কলেজ ছাত্রী শামীমা আক্তার বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত জীবনীসহ বইগুলো এখানেই ক্রয় করতে পারলে ভাল হতো।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা তিনি কখনও দেখেননি। মেলার বঙ্গবন্ধু গ্যালারিতে তিনি প্রথমবারের মতো তা দেখেছেন।
মানিকগঞ্জের ঘিওর থেকে স্বপরিবারে আসা শিক্ষক আরিফুল ইসলাম বলেন, মেলায় কেনাকাটা আর হইহুল্লুর করতেই অনেকে আসেন। তবে বঙ্গবন্ধু গ্যালারি পরিদর্শনে শেখনীয় বিষয় রয়েছে। মেলায় আগত সকলকেই বঙ্গবন্ধু গ্যালারি পরিদর্শন করা প্রয়োজন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাণিজ্য মেলায় বঙ্গবন্ধু গ্যালারি প্রদর্শিত হয়ে আসছে। তাতে সাড়াও পড়ে বেশ। অনেক পিতা মাতার ইচ্ছায় শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুকরণ করছে।
উল্লেখ গত ৬ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার নো মাস্ক, নো সার্ভিস এ প্রতিপাদ্যকে মেলায় বার বার মাইকিং করা হয়েছে। গেইটে হ্যান্ড স্যানেটাইজার ব্যবহার ছিল বাধ্যতামূলক।