রূপগঞ্জে উত্তপ্ত ছাত্র রাজনীতি

ফিচার রাজনীতি রূপগঞ্জ শীর্ষ সংবাদ

নিউজ রূপগঞ্জ ডটকম:
ছাত্রদলের কমিটি করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জ। উপজেলা ছাত্রদল তিনটি বলয়ে বিভক্ত হয়েছে। তিন বলয়ের মধ্যে রয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এড. তৈমূর আলম খন্দকার , বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দীপু ভূইয়া, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজি মনিরুজ্জামান। রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদলের সভাপতি পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছে কাজী মনিরুজ্জামানের বলয়ের সুলতান মাহমুদ, আবু মোহাম্মদ মাসুম (বয়সের কারণে বাদ পড়তে পারে) , কামরুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান দীপু বলয়ের নাহিদ হাসান ভূঁইয়া, তৈমূর বলয়ের মাসুদুর রহমান মাসুম। তিন বলয় ছাড়াও জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মশিউর রহমান রনির আত্মীয় মেহেদী হাসান মিঠু উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক পদ প্রত্যাশী । তাকে নিয়েও চলছে নানা হিসাব -নিকাশ। রনি ক্ষমতার অপব্যবহার করলেই মিঠু হয়ে যেতে পারে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক।
আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক, সদস্য সচিব আর দুটি পৌরসভাসহ সরকারি মুড়াপাড়া কলেজের কমিটিতে জায়গা পেতে প্রার্থীদের চলছে তদবির লবিং আর মাঠ গোছানোর কাজ। মোস্তাফিজুর রহমান দীপু বলয়ের নাহিদ হাসান ভূঁইয়া ছাত্রদলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসুক তা মেনে নিতে পারছে না কাজী মনিরুজ্জামানের বলয়ের সুলতান মাহমুদ,আবু মোহাম্মদ মাসুম। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। গত ১৫ জুলাই রূপগঞ্জ থানা ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুমের নেতৃত্বে উপজেলা ছাত্রদলের একটি অংশ দালাল ছাড়া ছাত্রদলের কমিটির দাবিতে ভুলতা-গাউছিয়া এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মানববন্ধন করেছে ।
এর আগে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আকরামুল হাসান মিন্টুর মুক্তির দাবিতে সোমবার ( ১৩ জুলাই) গাউছিয়া এলাকায় ছাত্রদল নেতা নাহিদ হাসান ভূঁইয়ার সমর্থকরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

করোনা দুর্যোগে ছাত্রদলের এমন কর্মকান্ডে ক্ষুব্দ ছাত্রলীগ। তারা ছাত্রদলের নাশকতা ঠেকাতে মাঠে রয়েছে।
গত ১৪ জুলাই রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ফয়সাল শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ ভুইয়া মাছুম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের নিরলস পরিশ্রমে রূপগঞ্জের প্রতিটি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। সরকারের সফলতা আর মন্ত্রীর নিরলস পরিশ্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল বিভিন্নভাবে নাশকতা চালানোর অপচেষ্টা করছে।
বিজ্ঞপ্তিতে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সেক্রেটারী উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটের সভাপতি ও সেক্রেটারী সহ সকল নেতাকর্মীদের ছাত্রদলের নাশকতাসহ অপকর্ম ঠেকাতে নির্দেশ দিয়েছে।
ছাত্রলীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তির পর ১৫ জুলাই ভুলতা-গাউছিয়া এলাকায় ঢাকা -সিলেট মহাসড়কে মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। জানা গেছে ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুমের বাড়ির গেট ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
এরপর ছাত্রলীগকে হুমকি দিয়ে ছাত্রদলকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে।
স্ট্যাটাসে ছাত্রদল নেতারা বলেন, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তোদের প্রতিটা দায়ের কোপ লেগেছে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের হাজারো নেতা কর্মীর কলিজায়। এই দিন,দিন নয়। আরো দিন আছে এই দিনেরে নিয়ে যাবে সেই দিনেরও কাছে । রেডি থাকিস।
এদিকে ১৫ জুলাই বুধবার মানববন্ধন শেষে বাসায় ফেরার পথে রূপগঞ্জ উপজেলার ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে খাম্বার সাথে বেধে ছাত্রদলের তিন কর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে । নির্যাতিত তিন ছাত্রদল নেতা হলেন, ভুলতা ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম বাবু, আলামিন হোসাইন ও বিজয় হোসাইন । এদিকে এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের একাংশ। ১৬ জুলাই বৃহস্পতিবার ছাত্রদল নেতা আবু মোহাম্মদ মাসুম ছাত্রদলের ওই তিন নেতাকে বেধে রাখার ছবি তার ফেসবুকে পোস্ট করে বিএনপির কেন্দ্রী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়াকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ভুলতা ফ্লাইওভারের নিচে এই ছবিটার চিত্রনাট্য লিখেছেন নিজ দলের এক ধনকুবের! যা সম্পূর্ণ পরিস্কারভাবে প্রস্ফুটিত হয়ে গেছে। মুখোশের উপরিভাগে ছিল সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ। যাদের নাম শুনলে আগ থেকেই ঘৃনায় মুুখ ঘুরিয়ে নেন মানুুষজন।’ আবু মাসুমের এমন পোস্টে ছাত্রদলের বেশকজন নেতাকর্মী ভূঁইয়াকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে মন্তব্য করেছেন। সেই সঙ্গে দিপু ভুঁইয়াকে এর জবাব ভবিষ্যতে দিতে হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন।
এর আগে দিপু ভুঁইয়াকে ইঙ্গিত করেই আবু মাসুম লিখেছেন, মন খারাপের সময় কাহারো অনুকম্পা ভাল লাগেনা, শুধু শিখতে চাই, ধন্যবাদ ভূঁইয়া সাহেব।’ পরবর্তীতে আবারও লিখেছেন, ‘প্রায় ৪৮ ঘন্টা পর বিএনপি-রুপী দালালদের টনক নড়ছে! খেলা শেষ বৃথা চেষ্টা কইরা লাভ নাই। আমজনতার কাছে সব পরিষ্কার।’ বিএনপি নেতা দিপু ভুঁইয়ার ইন্ধনেই ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর এমন অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে দাবি উপজেলা ছাত্রদলের একাংশের । অন্যদিকে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি হওয়ার গুঞ্জনে প্রায় প্রতিদিনই স্থানীয় নেতারা বিভিন্ন ইউনিয়নের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
বিভিন্ন সুত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে , ছাত্রদলের তিন কর্মীকে বেধে নির্যাতনের ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত নয়। জড়িত একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র।

জানা গেছে ১৯৯৫ সালে আনোয়ার সাদাত সায়েমকে সভাপতি ও আশরাফুল হক রিপনকে সাধারন সম্পাদক করে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের একটি পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ২০০২ সালে ঘয়োরাভাবে একই কমিটি পূর্নগঠন করা হয়।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *