পৌরমাতার হাতধরেই চলতে চায় পৌরবাসী

তারাবো পৌরসভা রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ

নিউজ রূপগঞ্জ ডটকম: হাছিনা গাজী ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঋণগ্রস্থ তারাব পৌরসভার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি নারায়ণগঞ্জ ১ আসনের সংসদ সদস্য বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের সহধর্মিণী ।
মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে সর্বপ্রথম তিনি মাদক চাঁদাবাজ সন্ত্রাসমুক্ত শান্তিময় পৌরসভা গড়তে কাজ শুরু করেন। এর পর তিনি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ছুটে বেড়ান । নিয়ে আসেন একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প। দূর করেন জলাবদ্ধতা ও রাস্তাঘাটের সমস্যা। এ জন্য পৌরবাসী তাকে পৌরমাতার খেতাব দিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে হাছিনা গাজীর আগে দায়িত্ব পালন করা মেয়র ১৫ বছর মিলে যে উন্নয়ন করেছে তার চেয়ে ১০ গুন বেশি উন্নয়ন হয়েছে হাছিনা গাজীর সাড়ে ৪ বছরে।
২০১৮/১৯ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নে প্রথম হয় তারাব পৌরসভা। পৌরসভার ৩৫ হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করছেন তিনি ।
পৌরসভায় কোনো তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্র ছিলো না বর্তমানে তথ্য ও অনুসন্ধান কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। পৌর ভবন নিমাণসহ পুরাতন ভবনকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পৌরবাসী পানির সমস্যা দূর করার জন্য পাইপ পানি সরবরাহ প্রকল্পের জন্য নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। পৌরসভায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মানের জন্য সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। তারাব পৌরসভা ডিজিটাল মিউনিসিপালিটি সার্ভিস সিস্টেমের আওতায় এসেছে । নগরবাসী পেয়েছে স্মার্টকার্ড। গন্ধর্বপুরে বাস্তবায়ন হচ্ছে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি শোধনাগার।
নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ পৌরসভায় ডে -কেয়ার সেন্টার চালু করা হয়েছে । বাজেট বাস্তবায়নে হাছিনা গাজী স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি জনগণের মুখোমুখি হয়েছেন নিয়মিত। চার বছরে তিনি জনকল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে পৌরবাসীর প্রশংসা পেয়েছেন। প্রথম নারী মেয়র হিসেবে তিনি ভীষণ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৪ বছরপূর্ণ হয়েছে হাছিনা গাজীর। তিনি নির্বাচনের আগে জনগণকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার চারগুনেরও বেশি কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। তার উপর নাগরিকদের আস্থা বাড়ছে। পৌরসভা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আগামী ডিসেম্বর মাসে তারাব পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে মেয়র পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তারা হলেন বর্তমান মেয়র হাছিনা গাজী, তারাব পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন, বিএনপির সাবেক মেয়র শফিকুল চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব, রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন, আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল চৌধুরী, রমজান আলী, তারাব পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লায়ন আতিকুল ইসলামসহ অনেকে।
বর্তমান মেয়র হাছিনা গাজী নির্বাচন করলে তিনিই হবেন আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। সেক্ষেত্রে নৌকার জয় ধরে রাখা সহজ হবে। আর যদি কোনো কারণে রূপগঞ্জ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাছিনা গাজী নির্বাচন না করেন সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ জয় ধরে রাখতে পারবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে দ্বন্দ্ব।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীকের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান। তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী। অর্থ ও জনপ্রিয়তা দুটোই রয়েছে তার। তবে দীর্ঘদিন যাবত সবকিছুতেই তার একক আধিপত্য থাকায় বেশ কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মী তার বিরুদ্ধে রয়েছে। যদিও প্রথম দিকে আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব পৌর নির্বাচন করতে চাননি বলে জানা গেছে। তার ইশারায় রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন, তারাব পৌর আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা নজরুল চৌধুরী মাঠে নামে। ঘটনাক্রমে এখন আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিব নিজেই মেয়র প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে। আর এ নিয়ে নজরুল চৌধুরী এবং মোস্তাফিজুর রহমান শাহীনের সাথে আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিবের কিছুটা দূরত্ব তৈরী হয়েছে। তিনি যদি মনোনয়ন পান সেক্ষেত্রে নজরুল চৌধুরী এবং মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান হাবিবকে মুখে সমর্থন দিলেও তলে তলে তার বিরোধীতা করতে পারে।
রূপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহীন দীর্ঘদিন যাবত প্রচারণা চালাচ্ছে। করোনায় কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। যুব ও ছাত্র নেতাদের সমর্থন রয়েছে তার উপর। আবার মেয়র হাছিনা গাজীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এই যুব নেতা।

বিএনপির সাবেক মেয়র শফিকুল চৌধুরীর আপন ভাই নজরুল চৌধুরী। তাকে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে ।
বিএনপির সাবেক মেয়র শফিকুল চৌধুরী ও নজরুল চৌধুরীকে দল মনোনয়ন দেবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আবার ঘটনাক্রমে তারা দুইভাই দুই দল থেকে মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির তৃণমূল মেনে নাও নিতে পারে। বিএনপির মধ্যেও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাদের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আছে। গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তারাব পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন । তার বিরোধীতা করেছিলেন (বিদ্রোহী প্রার্থী) শফিকুল চৌধুরী। এবার কে বিএনপির মনোনয়ন পাবে সে বিষয়েও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
গাজী গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরুণ শিল্প উদ্যোক্তা বিসিবি ও যমুনা ব্যাংকের পরিচালক গাজী গোলাম মর্তুজা পাপ্পার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত তারাব পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর লায়ন আতিকুল ইসলাম । তার নির্দেশে তিনি পৌর এলাকায় অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। নিজস্ব টিমের মাধ্যমে তিনি খাদ্য সহায়তা পৌছে দিচ্ছেন। পৌরবাসী তার এ কাজে মুগ্ধ। দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে তিনিও পিছিয়ে নেই।
তবে সবকিছু বালু ছিটে প্রার্থী হবেন আওয়ামী লীগ নেতা রমজান আলী । তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছেন। বরপা এলাকা তার রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। তিনি রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শাহজাহান ভুঁইয়ার কাছের লোক হিসেবে পরিচিত। কোনো কারণে যদি রমজান আলী দলীয় মনোনয়ন না পান সেক্ষেত্রে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন বলে একটি সুত্রে জানা গেছে। তার রয়েছে বিশাল অর্থ সম্পদ । আর রমজান আলীর সাথে নজরুল চৌধুরীর রয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। তিনি খরচ করার মনোভাব নিয়ে মাঠে রয়েছেন । তারা কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
নাম প্রকাশ্যে অনইচ্ছুক তারাব পৌরসভার এক কাউন্সিলর জানান, গাজী পরিবারের হাত ধরেই তারাব পৌরসভার এত উন্নয়ন । হাছিনা গাজী যদি স্বেচ্ছায় অবসরে যান সেক্ষেত্রে গাজী পরিবারের অন্য কোনো সদস্য এই পৌরসভার হাল ধরতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে রয়েছে কোন্দল। আর এই কোন্দল মেটাতে কাজ করতে হবে গাজী পরিবারকে । সেক্ষেত্রে গাজী পরিবার থেকে হাল ধরতে পারে যে কেউ। তা না হলে কঠোর হস্তে কোন্দল দমন করতে মাঠে নামতে হবে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীককে। অন্যথায় তাদের বিজয় ধরে রাখা কঠিন হবে। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। সব সময় বলে দেবে।

এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়র হাছিনা গাজী নিয়মিত কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন। পৌরবাসী নিজেদের অসুবিধা- সুবিধা নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। পৌরসভার মাধ্যমে সমাধানযোগ্য হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেন। প্রয়োজনে আর্থিক সহযোগিতা ও সমাধানের পথ দেখিয়ে দেন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রণ পাওয়া মাত্র অংশ নেন। সব মিলিয়ে হাসিনা গাজীর পথেই চলতে চায় পৌরবাসী।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *