অন্ধ বধিরের টাকায় পকেট ভারী তৈমূরের

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ

অনলাইন রিপোর্ট: প্রতারণা, দুর্নীতি, অন্ধ ও বধির সংস্থার অর্থ আত্মসাৎ, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ এমন কোনো অনিয়ম নেই যা করেননি স্বঘোষিত মজলুম নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। লুট করেছেন জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার কোটি কোটি টাকা। সে টাকায় বর্তমানে আলিশান-জীবন যাপন করছেন তিনি। প্রতিবন্ধীদের টাকা লুটের দায়ে চলতি বছর সংস্থার নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভরাডুবি হয় তার।

তৈমূরের বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন-সংগ্রামও করেছেন অন্ধ ও বধিররা। তলব করা হয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ। দুদক তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ৩০ বছর ধরে বধিরদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তৈমূর নারায়ণগঞ্জ বধির সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। একই সঙ্গে ১৯৮৮ সালে তিনি সংস্থার আজীবন-সদস্য পদ পান।

আরও জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফেডারেশন অব ডেফ (বিএনএফডি) ঢাকার (জাতীয় বধির সংস্থা) সভাপতি ছিলেন হারিছ চৌধুরী। সহসভাপতি ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার ও প্রয়াত বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু। গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হারিছ চৌধুরী দেশ ছেড়ে পালালে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনএফডির সভাপতির দায়িত্ব পান সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। সেই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিএনপি জোটের সময় দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার তৎকালীন রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর স্ত্রী জোছনে আরা চৌধুরীকে বেআইনিভাবে অন্ধ ও বধির সংস্থার ১১টি দোকান বরাদ্দ দেন। এ ছাড়া বধির সংস্থার তহবিল তছরুপ করে অন্যদের সহায়তায় প্রায় কোটি টাকা আত্মসাৎ করায় বধিররা রাস্তায় নেমে তার বিরুদ্ধে মানববন্ধন-বিক্ষোভসহ নানা ধরনের আন্দোলন করেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত বধির সংস্থার নির্বাচনে বিপুল ভোটে ভরাডুবি ঘটে তৈমূরের। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় জাতীয় অন্ধ ও বধির সংস্থার সভাপতির পদে আসা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার সংস্থার লালবাগের জায়গা উদ্ধার করে সেখানে বধির স্কুল ও কলেজ স্থাপন, অত্যাধুনিক জাতীয় বধির হাসপাতাল স্থাপন, জাতীয় বধির ব্যাংক স্থাপন, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় বধির স্কুল ও সংগঠন স্থাপন, আন্তর্জাতিক বধির সম্মেলন বাংলাদেশে অনুষ্ঠানসহ জাতীয় ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট স্থাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে সভাপতির পদ দীর্ঘ সময় দখলে রাখেন। অথচ সবকিছুতেই সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন তৈমূর আলম খন্দকার। উল্টো বধির সংস্থার জমি ও সম্পদ পছন্দের লোকজনকে পাইয়ে দিতে কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজের পকেট ভারী করেন।

২০০৩-২০০৭ মেয়াদে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তৈমূর আলম খন্দকার ঢাকার বধির স্কুলের জন্য লালবাগে ১ একর ও নরসিংদী বধির স্কুলের জন্য ৫০ শতাংশ জমি কেনেন। সে সময়ের বাজার মূল্যের ৩ গুণ টাকায় জমিগুলো কেনার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিজে আর্থিক লাভবান হতেই জমি কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে ওই সময়। এ ছাড়া বিআরটিসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের সময় ২ লাখ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করে ৪০ জন বধিরকে বিআরটিসিতে চাকরি দেন। জাতীয় বধির হাসপাতাল নির্মাণের জন্য কয়েক কোটি টাকার চাঁদাবাজি করে সামান্য কিছু জমা করেন হাসপাতাল তহবিলে। এ ছাড়া অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থার স্থগিত ও বাতিলকৃত আজীবন সদস্যের মধ্যে হাই কোর্টে মামলা করে তার পছন্দের ৫৫ জনকে পুনরায় সংস্থার সদস্যপদ পাওয়ার ও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি। পছন্দের লোকজনকে সংস্থায় ইচ্ছামাফিক নিয়োগ ও সদস্যপদ দেন তৈমূর আলম খন্দকার। এসব ঘটনায় ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট তৈমূরকে নোটিস দেন দুদকের সহকারী পরিচালক শেখ আবদুস সালাম। শুনানিতে সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। তা ছাড়া চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি অন্ধ ও বধিররা তার বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তৈমূরের দখল থেকে মুক্তি চাওয়ার বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় দাঁড়ান তারা। সংস্থার অর্থ আত্মসাতের মামলা থাকলেও চতুর আইনজীবী তৈমূর কৌশলে মামলাগুলো ধামাচাপা দিয়ে রেখেছেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তৈমূর আলম খন্দকার প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। প্রতিবেদকের সঙ্গে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে যা খুশি তাই লিখে দিতে বলে ফোন কেটে দেন। ( সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন)।

শেয়ার করুনঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *